বহু চড়াই উৎরাইয়ের পর অবশেষে গত ১২ এপ্রিল ২০১১ মৌকরার বার্ষিক মাহফিল অনুষ্ঠিত হল। ভন্ড পীর নেছারের দাওয়াতে ছারছীনার পীর সাহেব মৌকরাতে মাহফিল করবেন না বলে আলেম সমাজ ও সচেতন মানুষের ধারণা ছিল। শেষ পর্যন্ত সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হল এবং ভন্ড পীর নেছারের দাওয়াতেই ছারছীনার পীর সাহেব মৌকরাতে মাহফিল করলেন। মাহফিলের তারিখ নির্ধারণের পর থেকে মাহফিল শেষ হওয়া পর্যন্ত সবগুলো ঘটনাই ছিল নাটকের মতো করে সাজানো। মৌকরা মাহফিলের ৭ দিন আগ থেকেই রহস্যজনক কারণে ছারছীনার পীর সাহেব নিজের ০১৭১১ ৮২৩০৮৮ মোবাইল নম্বরটি বন্ধ করে রাখেন, যাতে কোন মানুষ অথবা মিডিয়ার মুখোমুখি হতে না হয়। পীর নেছারকে নিয়ে ছারছীনার পীর সাহেবের এত ভয় কেন? পীর নেছার যদি সাধুই হয়, তাহলে তার চরিত্রের ব্যাপারে ছারছীনার পীর সাহেব সরাসরি মাহফিলে জনতাকে ব্যাখ্যা দিলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। সারাদেশ যখন ভন্ড পীর নেছারকে নিয়ে থই থই করছে, তখন ছারছীনার পীর বিভিন্ন ইঙ্গিতে কথা বলেন। মানুষ ইঙ্গিত ঝুঝতে চায় না। সরাসরি বলে দিলেই হয়, পীর নেছারের চরিত্র নিয়ে যে কথা ওঠেছে তা সত্য অথবা মিথ্যা।
গভীর রাতে ছারছীনার পীরের মৌকরাতে যাওয়ার কারণ কী? ১২ এপ্রিল ২০১১ নাঙ্গলকোট উপজেলার ভিতরে থেকেও অনেক রাত করে মৌকরাতে গেলেন ছারছীনার পীর সাহেব। তখন সময় রাত ১০:১৫ মিনিট। গিয়েই তিনি সরাসরি মঞ্চে বসলেন। কিছু সময় অবস্থানের পর মঞ্চ থেকে নেমে আবার রাতেই ফিরে গেলেন। এ সব কিছু দেখে মানুষের মনে নতুন প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে। অন্যান্য বছর মাহফিলে আসলে যে রুমটিতে ছারছীনার পীর সাহেব বিশ্রাম নিতেন, সেই রুমটিতে এবার গেলেন না, এমন কি মৌকরা দরবারে এক গ্লাস পানিও খেলেন না, তারই কারণ কি? তাহলে ছারছীনার পীর সাহেবেকে কোন মহল প্রভাবিত করে মৌকরাতে নিয়ে আসলেন!
১২ এপ্রিল ২০১১ সাংবাদিকের একটি দল ছারছীনা পীর সাহেবের সাক্ষাতকার নেওয়ার জন্য ফোন করে দেখেন, পীর সাহেবের মোবাইল ফোনটি বন্ধ। তারপর পীর সাহেবের জামাতা মাওঃ রুহুল আমিনের নম্বরে ফোন করে পীর সাহেবের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তিনি জানান পীর সাহেব ব্যস্ত আছেন। সাংবাদিকরা জানতে চান, কখন পীর সাহেবের সঙ্গে কথা বলা যাবে। পীর সাহেবের জামাতা জানান, আপনাদেরকে কিছুক্ষণ পর জানাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল এই মোবাইলটিও বন্ধ। কিসের এত ভয় সাংবাদিকের মুখোমুখি হতে? শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, ছারছীনার পীর সাহেব নিজ গাড়ীর বদলে অন্য একটি গাড়ীতে করে মৌকরাতে মাহফিলে গেলেন। ১২ এপ্রিল হিযবুল্লার নেতৃবৃন্দ সবাই মিডিয়ার ভয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে আড়ালে চলে গেলেন। এতে বুঝা যায়, চোরের মনে পুলিশ পুলিশ।
দীর্ঘ দিন পর কামরুন্নাহারের স্বামী মাওঃ কাদেরের মৌকরাতে শুভাগমণ হল। মাওঃ কাদের রহস্যজনক কারণে দীর্ঘ দিন পর মৌকরা দরবারে আসলেন এবং এক লক্ষ টাকাও দান করলেন। মিডিয়ায় তার স্ত্রী ও মৌকরার পীর নেছারকে নিয়ে যে খবর প্রকাশিত হল তা কি মাওঃ কাদের শুনেন নাই? শুনে থাকলে মাহফিলে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে এ সব ব্যাপারে একটু ওয়াজ করলে মানুষের ভুল ভাঙতো। ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগানো যায়, কিন্তু ঘুমের ভান করা ব্যক্তিকে জাগানো যায় না। মাওঃ কাদের ও তার স্ত্রী কামরুন্নাহার দুজনেরই মোবাইল নম্বর পরিবর্তণ দেখে আমরা বুঝতে পারি যে, সব কিছুই মাওঃ কাদের অবগত আছেন। তবে কতদিন, কত বার মোবাইল নম্বর পরিবর্তণ করবেন এবং কতক্ষণ নিজ মোবাইল নম্বরটি মিডিয়া থেকে গোপণ রাখবেন তা সময়ই বলে দেবে।
পীর নেছার ও মাওঃ কাদের আসলেই কি দোস্ত? নাকি দুশমন? আমরা কামনা করি, পীর নেছার ও মাওঃ কাদেরের সেই পুরোনো বন্ধুত্ব আবার পুণঃস্থাপিত হোক। কিন্তু আবার যেন কামরুন্নাহারের স্বামী মাওঃ কাদেরের কোন অভিযোগ আমাদের শুনতে না হয়।
ভন্ড পীর নেছারের নাটকের সমাপ্তি কবে হবে দেশবাসী সে অপেক্ষায় আছে, থাকবে।